ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা থেকে উদ্যোক্তার গুণাবলি সম্পর্কে বেশ ধারণা লাভ করা যায়। অনেকে মনে করেন উদ্যোক্তাগণ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা। অর্থাৎ জন্মসূত্রেই তিনি বহু ব্যক্তিগত গুণের অধিকারী হন যা তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে অবশ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায়। একজন উদ্যোক্তার প্রধান প্রধান গুণসমূহ হলো-
|
সফল উদ্যোক্তাগণ দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো চিহ্নিত করে তা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম। শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকার প্রদত্ত সুযোগের ব্যবহারে তারা দক্ষতার পরিচয় দেন। তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সফল উদ্যোক্তাগণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো আগে থেকে অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলা এবং অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা সফল উদ্যোক্তার বিশেষ গুণ বলে বিবেচিত হয়। তারা ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বিচক্ষণতার সাথে নিরূপণ করেন এবং তা এড়ানো বা কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণ সফল উদ্যোক্তার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। প্রয়োজনবোধে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলা এবং লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয় সাধন উদ্যোক্তার বড় আরেকটি গুণ।
ব্যবসায় থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তাকেই ব্যবসায়ের ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়। একজন সফল উদ্যোক্তা পূর্বেই ঝুঁকির সম্ভাব্য কারণ ও মাত্রা অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সফল উদ্যোক্তা গতিশীল নেতৃত্ব দানের অধিকারী হয়ে থাকেন। সফল উদ্যোক্তা পুঁজি সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থসংস্থান ও তার যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত ও জনসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে দক্ষতার পরিচয় দেন। ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তা গভীর জ্ঞান রাখেন। প্রচলিত প্রযুক্তির সাথে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন করা সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তার ধারণা সময়োপযোগী। উদ্ভাবনী শক্তির বলে তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার নতুন উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ এবং তা ব্যবহার করেন । তারা শিল্প উদ্যোগের নব নব দিগন্ত উন্মোচন করেন।
উদ্যোক্তা চ্যালেঞ্জমূলক কাজ করতে বিশেষ আনন্দ পান। ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে নিরলস শ্রম দেন এবং ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাস পরিহার করেন। তিনি নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি এত আস্থাশীল যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম কাজ করেন এবং ফলাফল অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত থাকেন। কোনো কারণে প্রথম বার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয় বার নতুন উদ্দ্যোমে কাজ শুরু করেন। কাজে সাফল্য অর্জনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। প্রকৃত উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল অকপটে স্বীকার করেন এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়োগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সফল উদ্যোক্তা তাদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্তি ও অসীম আনন্দ পান।
আরও দেখুন...